বাংলা চলচ্চিত্রে ক্যাপ্টেন এহতেশামের হাত ধরে ধুমকেতুর মত আগমন হয়েছিলো শাবনূরের।এগারো কি বারো বছরের সেই ছোট্ট কিশোরী মেয়েটি অতি ছোট হওয়ার কারণে একটু সময় নিতে হলো প্রথম চলচ্চিত্রটি মুক্তির।তখন রেডিওতে শাবনূরের প্রথম সিনেমার দুইটি গান খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো,তবে ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি আশানুরুপ ব্যবসা করতে পারেনি।১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় শাবনূরের দ্বিতীয় সিনেমা ‘দুনিয়ার বাদশা’ সিনেমাটি সুপারহিট ব্যবসা করে।ঐ বছর শাবনূরের মোট চারটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিলো সবক’টি সিনেমা ছিলো ব্যবসায়সফল এবং এই বছর ‘তুমি আমার’ সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় নিয়ে শাবনূর অর্জন করেছিলেন ‘দর্শক ফোরাম’ পুরস্কার।১৯৯৫ সাল ছিলো তার জন্য আরো বেশি সাফল্যময়।এই বছর মুক্তি পায় “স্বপ্নের ঠিকানা’র মত বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ ব্যবসাসফল সিনেমা।এই ‘স্বপ্নের ঠিকানা’য় শাবনূরের অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন সমালোচরাও এবং যথারীতি শাবনূর পেয়েছিলেন বাচসাস পুরস্কার।১৯৯৬ সালে শাবনূর যেন রীতিমত ছাড়িয়ে গেলেন তার সমসাময়িক সবাইকে।হেট্রিক ব্লকবাস্টার সিনেমা এই বছর শাবনূরকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়।দর্শক জরিপে প্রায় ৩৬% ভোট পেয়ে শাবনূর নির্বাচিত হয়েছিলেন সেরা প্রিয় তারকা।তাছাড়া “তোমাকে চাই” সিনেমার কপিরাইট তখন মাদ্রাজে বিক্রি হয়েছিলো যা বাংলা চলচ্চিত্রে ইতিহাসে একটি রেকর্ড সৃষ্টি করে।
এভাবে,শাবনূর বাংলা চলচ্চিত্রে নিজের প্রভাব খাটিয়ে ডমিনেট করলেন প্রায় দুই দশক,জনপ্রিয়তায় সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়ে দর্শক জরিপে জয় করে নিয়েছিলেন চলচ্চিত্র ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ সর্ব্বোচ্চ দশবার সেরা জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিভাগে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার।
শাবনূর দর্শকের চোখে কখনো ধরা দিয়েছিলেন “আনন্দ-অশ্রু” দোলা হয়ে,কখনো “কাল সকালে’র মালতী হয়ে,কখনো ‘নিরন্তর’ এর তিথি হয়ে,কখনো “মোল্লাবাড়ির বউ” এর পারুল হয়ে।তিনি কখনো পর্দায় হাজির হয়েছে “দুই নয়নের আলো’র সেঁজুতি হয়ে,কখনো “চার সতীনের ঘর” এর ফুলবানু হয়ে।শাবনূর হাজির হয়েছেন “বাঙলা”র সুখী হয়ে আবার “স্বপ্নের ঠিকানা” সুমি হয়ে।চরিত্রের ভেরিয়েশন রেখে শাবনূর রোমান্টিক,সামাজিক,পারিবাবিক সব ধরনের চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করলেন।তার অভিনয় এতোটা প্রকট ছিলো যে তখন কিংবদন্তী পরিচালক আমজাদ হোসেন তার অভিনয়ের প্রশংশা করেছিলেন।
শাবনূর চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার বিরুদ্ধে একাই সংগ্রাম করেছিলেন।শাবনূর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “প্রয়োজনে চলচ্চিত্র ছেড়ে দিবো তারপরও অশ্লীল সিনেমায় অভিনয় করবো না।”স্রোতের বিরুদ্ধে যাত্রী শাবনূর যেন তাই করলেন।অশ্লীলতার মত অন্ধকারময় মময়ে নিজের আলো ছড়িয়ে সুস্থধারার সিনেমায় অভিনয় করে তিনি দর্শকদের হলমুখী করেছিলেন। ©
সুপারস্টার শাবনূর